ঢাকা , সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ১৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ফের রাজনীতিতে বাড়ছে উত্তাপ হলে রাত্রিকালীন বিধিনিষেধ প্রত্যাহার চায় বাম ছাত্রসংগঠনগুলো পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ‘বাঘ’ আসতে বাধা কোথায় ১২৩ সংগঠন ১৬০৪ বার অবরোধ করেছে-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চবিতে সংঘর্ষে আহত দেড় শতাধিক নুরের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিলেন রাষ্ট্রপতি বই মুদ্রণে আন্তর্জাতিক দরপত্রের সিদ্ধান্ত হয়নি ঢাবি শিক্ষক কার্জনসহ ২ জনের জামিন মেলেনি ডাকসুতে ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে রিট, শুনানি আগামীকাল নেত্রকোনায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে ইউপি সদস্যসহ নিহত ২ প্রথম রোবটিক রিহ্যাব সেন্টার চালু মোংলা-খুলনা মহাসড়ক এখন মৃত্যুফাঁদ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৪ হাসপাতালে ভর্তি ৫৬৮ হত্যা-চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামছে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগ আমলেও এমন হামলা হয়নি, এর দায় সরকারকে নিতে হবে- উপদেষ্টা আসিফ মোবাইল ইন্টারনেটের সর্বনিম্ন গতি ১০ এমবিপিএস রেকর্ড ভেঙে পুঁজিবাজারে বছরের সর্বোচ্চ লেনদেন গাইবান্ধায় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ পুলিশ-সাংবাদিকসহ আহত অন্তত ১০ লাগাম ছিঁড়েছে হত্যা-চাঁদাবাজি রাস্তায় নামছে সাধারণ মানুষ র‌্যাবের ডিজি ও এসবি প্রধানের চাকরির মেয়াদ বাড়ল

লাগাম ছিঁড়েছে হত্যা-চাঁদাবাজি রাস্তায় নামছে সাধারণ মানুষ

  • আপলোড সময় : ০১-০৯-২০২৫ ০৪:৪৭:১৭ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০১-০৯-২০২৫ ০৪:৪৮:৫৭ অপরাহ্ন
লাগাম ছিঁড়েছে হত্যা-চাঁদাবাজি রাস্তায় নামছে সাধারণ মানুষ
* দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলো এখনো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ আগের মতো পুরোপুরি করতে না পারায দিন দিন হত্যাসহ প্রায় সব ধরনের অপরাধ বাড়ছে। * সাম্প্রতিক সময়ে স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক, পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধ, জমিসংক্রান্ত বিরোধ, মাদক কারবার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে বাড়ছে হত্যাকান্ডের ঘটনা। * গত ছয় মাসে রাজধানীতে সংঘটিত ২১৭টি হত্যাকাণ্ড বিশেষণ করে দেখা যায় তার বেশির ভাগই ঘটেছে রাজনৈতিক কারণে দেশে নিয়ন্ত্রণহীন হত্যা ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অতিষ্ঠ দেশের সাধারণ মানুষ। বাধ্য হয়ে প্রতিবাদে তারা রাস্তায় নামছে। কারণ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ চাঁদাবাজদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে মব সৃষ্টি করেও চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। আর চাঁদাবাজ চক্র এতোই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে অভিযোগ করলে প্রাণ হারানোর শঙ্কা থাকে। চাঁদাবাজদের দাপটে বিভিন্ন স্থানে জিম্মি থাকা মানুষ আতঙ্কের সঙ্গে বসবাস করছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অনেক স্থানেই বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ভুক্তভোগী এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না। বরং বেপরোয়া দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে রাস্তায় বর্বরতা চালিয়ে মানুষকে হত্যা করছে। ভয়ে অনেকে মুখ ফুটে অভিযোগ করতে পারছে না পুলিশের কাছেও। নরসিংদী, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় অনেক ক্ষেত্রে চাঁদা না পেয়েও হত্যাকাণ্ডও ঘটানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সমপ্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে শুরু করে সাভার, ঝিনাইদহ, মিরসরাই, ময়মনসিংহ, আশুলিয়া ও চট্টগ্রামে চাঁদাবাজিবিরোধী আন্দোলনে রাস্তয় নেমেছে মানুষ। প্রতিবাদকারীদের একটাই অভিযোগ, সর্বত্র চাঁদাবাজি ও নিরাপত্তার অভাব। সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন থানায় গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের গত জুন পর্যন্ত এক বছরে ৩ হাজার ৮৫৭টি হত্যা মামলা করা হয়েছে। তার মধ্যে আগের ২০০৯ সাল থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৪১০টি মামলা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মোট মামলার হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে ৩২১টির হত্যা মামলা করা হয়। তার মধ্যে ওই সময়ে মহানগর পুলিশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৮০টি মামলা করা হয়েছে। আর পুলিশের রেঞ্জগুলোর মধ্যে ঢাকা পুলিশ রেঞ্জে সবচেয়ে বেশি ৯০৩টি হত্যা মামলা করা হয়েছে। আগের অন্তর্ভুক্ত মামলা বাদ দিয়েও আগের ছয় মাসের (২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন) তুলনায় গত এক বছরে খুনের মামলা বেড়েছে। বিগত ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মোট এক হাজার ৫৩৩টি মামলা করা হয়। প্রতি মাসে গড়ে ২৫৬টি মামলা করা হয়। আর গত এক বছরে আগের মামলা বাদ দিয়ে (জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫) গড়ে ২৮৮টি হত্যা মামলা করা হয়েছে। সূত্র জানায়, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলো এখনো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ আগের মতো পুরোপুরি করতে না পারায দিন দিন হত্যাসহ প্রায় সব ধরনের অপরাধ বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক, পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধ, জমিসংক্রান্ত বিরোধ, মাদক কারবার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে বাড়ছে হত্যাকান্ডের ঘটনা। গত ছয় মাসে রাজধানীতে সংঘটিত ২১৭টি হত্যাকাণ্ড বিশেষণ করে দেখা যায় তার বেশির ভাগই ঘটেছে রাজনৈতিক কারণে। এমন পরিস্থিতিতে অতিসম্প্রতি ঢাকার মোহাম্মদপুর-আদাবরে চাঁদাবাজির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও মিছিল করে স্থানীয় শিক্ষক সমাজ। ওই কর্মসূচিতে ৭০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অংশ নেন। তাদের অভিযোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছেও নিয়মিত চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসীরা হুমকি দিচ্ছে। তার আগের দিন সাভার-বিরুলিয়া আঞ্চলিক সড়কে চার শতাধিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানববন্ধন করে। জাতীয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সংস্থা শপিং কমপ্লেক্সের (অন্ধ মার্কেট) আয়োজনে ওই কর্মসূচিতে অভিযোগ করা হয়, দোকান মালিকদের চাঁদা না দিলে দোকান দখলের ভয় দেখানো হয়। এরই মধ্যে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার আগে গত ১২ জুলাই ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের বাইপাস মোড়ে কয়েকশ’ সাধারণ মানুষ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মানববন্ধনে অংশ নেয়। তারা জানান, পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে চাঁদাবাজরা বাড়িতে গিয়ে চাঁদা চায়। না দিলে হুমকি ও হয়রানি শুরু হয়। চট্টগ্রামের বাঁশখালীর মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় দেশের অন্যতম বৃহৎ মৎস্য প্রকল্পটি এখন চাঁদাবাজদের কবলে। গত ২১ জুন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত চাষি ও এলাকাবাসী মানববন্ধন করে। তাতে অভিযোগ করা হয়, নিয়মিত চাঁদা দিতে না পারলে মাছ চাষে বাধা দেয়া হয়, এমনকি মাছ চুরি বা পুকুরে বিষ প্রয়োগের ঘটনাও ঘটেছে। ময়মনসিংহেও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশে মানববন্ধন করেছে ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। গত ১৭ জুন শহরের চরপাড়া মোড়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে জানানো হয়, সন্ত্রাসীরা নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের মালিকের কাছে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওয়ায় তাকে মারধর করে এবং হাসপাতালের ভেতরে ভাঙচুর চালায়। চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরাও রাস্তায় নেমেছে। গত ২৩ জুন আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় সাধারণ ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকরা মানববন্ধন করে চিহ্নিত চাঁদাবাজদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। ১৮ মে চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতু এলাকায় একই রকম মানববন্ধন করা হয়। তাতে পরিবহন শ্রমিকরা বলেন, অটোটেম্পো থেকে প্রতিদিন জোর করে চাঁদা আদায় করা হয়। না দিলে চালকদের মারধর করা হয়। যদিও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সারা দেশে একযোগে চিহ্নিত চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম। তালিকাটি দ্রুতই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হবে। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর জানান, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধেসরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। চাঁদাবাজি বা সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডে যে বা যারাই জড়িত থাকবে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। জননিরাপত্তায় পুলিশ আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। পুলিশ প্রতিটি হত্যার ঘটনার তদন্ত করছে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে প্রতিনিয়ত আইনের আওতায় আনছে। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। পুলিশ এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয়।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স